স্যামসন এইচ চৌধুরী ১৯৫৮ সালে পাবনার একটি বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন 'স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ওয়ার্কস' নামের একটি কারখানা। পরে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়
পাবনা শহরের শালগাড়িয়ার একটি বাড়িতে ছোট্ট পরিসরে যাত্রা শুরু হয়েছিল স্কয়ার পরিবারের। সে সময়ের সেই ছোট্ট পরিবারের পরিধি আজ বিস্তৃত। সেবার উদ্দেশ্য নিয়েই শুরু হয়েছিল স্কয়ারের যাত্রা। শিল্প সৃষ্টি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্য দিয়েও যে মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায় তা প্রমাণ করেছেন স্কয়ার গ্রুপের কর্ণধার স্বপ্নপুরুষ স্যামসন এইচ চৌধুরী। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে টগবগে সুদর্শন যুবক স্যামসন এইচ চৌধুরী গড়ে তুলেছিলেন স্কয়ারের এক মজবুত ভিত। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে লোভনীয় চাকরির আশা ত্যাগ করে বেছে নিয়েছিলেন শিল্প সৃষ্টির কঠিন পথ। তিনি স্বপ্ন দেখেছেন শালগাড়িয়ার ৩ হাজার বর্গফুটের স্কয়ার একদিন অনেক বড় হবে। এই স্বপ্ন বুকে নিয়ে অফুরন্ত উদ্যমকে পুঁজি করে সামনের সব প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়েছেন তিনি। উন্নয়নের গতিপথ থেকে কখনও পিছপা হননি তিনি। কঠোর পরিশ্রম, সততা ও শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে গড়ে তুলেছেন আজকের বিশাল বিস্তৃত স্কয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি।
স্যামসন এইচ চৌধুরী ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করলেও শিল্প স্থাপনের কাজ শুরু করেন পাবনা জেলায়। ১৯৫৮ সালে এ জেলার একটি বাড়িতেই স্থাপন করা হয়েছিল 'স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ওয়ার্কস' নামের প্রথম কারখানাটি। পরে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়।
তারা চার বন্ধু ১২ জন শ্রমিক নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন। বন্ধুদের মধ্যে দু'জন ছিলেন চিকিৎসক। এ কারখানায় প্রথম যে ওষুধটি তৈরি হয় তা হলো রক্ত পরিশোধনের 'এস্টন সিরাপ'। দেশীয় আমদানিকারকদের কাছ থেকে চড়া দামে কাঁচামাল কিনে তৈরি করতে হতো এ ওষুধ। ওষুধের গুণগত মানের সঙ্গে আপস করা হয়নি। মান বজায় রাখতে ওষুধের দামও বেশি পড়ে যায়। বাজারে নামকরা অন্য কোম্পানির একই ওষুধের দাম কম হলেও সাহস নিয়ে বাজারে ছেড়ে দেওয়া হয় এস্টন সিরাপ। গুণগত মানের কারণেই প্রেসক্রিপশনে এ সিরাপের নাম উল্লেখ করতে থাকেন স্থানীয় ডাক্তাররা। এক পর্যায়ে নামকরা কোম্পানির ওষুধের চেয়ে বেশি চলতে থাকে স্কয়ারের এ ওষুধ। এর কিছুদিন পরই এটি রফতানি শুরু করা হয়। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কর্তৃক বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ থাকায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রফতানির সামর্থ্য থাকলেও তা সম্ভব হয়নি।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে যোগাযোগ হয় বেলজিয়ামের জনসন অ্যান্ড জনসন ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে। ওই কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অনেক আলোচনার পর তাদের ফর্মুলায় তৈরি ওষুধ বাজারজাত করার অনুমতি দেওয়া হয়। সে সময় পৃথিবীর সব দেশের সব ওষুধ কোম্পানি বেলজিয়ামের ওই কোম্পানির সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত ছিল। ওই সময় ২-৩ বছর যোগাযোগের পর জনসন অ্যান্ড জনসন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে একটি প্রতিনিধি দল পাঠায়। প্রতিনিধি দল প্রথমেই পরিদর্শন করেন ঢাকা-চট্টগ্রমের বিভিন্ন ওষুধ কারখানা। পরে তাদের অনুরোধ করে নিয়ে যাওয়া হয় মফস্বল শহর পাবনার স্কয়ার কারখানায়। প্রথম দর্শনেই তাদের পছন্দ হয়ে গেল স্কয়ারের সেই ছোট্ট কারখানাটি। তখনকার স্কয়ার পরিবারের সদস্যদের মনোবল ও শৃঙ্খলায় মুগ্ধ হলেন প্রতিনিধিরা। অবশেষে চুক্তি হলো স্কয়ারের সঙ্গেই। এ চুক্তির আলোকে ১৯৭৫ সাল থেকে স্কয়ার জনসন অ্যান্ড জনসন ইন্টারন্যাশনালের ব্র্যান্ডের ওষুধই তৈরি করতে থাকে।
এদিকে ১৯৮২ সালে এরশাদ শাসনামলে নতুন ওষুধ নীতির কারণে জনসন অ্যান্ড জনসন ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে চুক্তি বাতিল হয়। নতুন ওষুধনীতি অনুযায়ী স্কয়ার সাধারণ মানুষের চিকিৎসার কথা মাথায় রেখে বেশি ওষুধ তৈরি করতে থাকে। এরপর থেকে স্কয়ারের ওষুধের বাজার সম্প্রসারণ হতে থাকে। একই সঙ্গে বাড়তে থাকে ব্যবসায় বিনিযোগ। বৃদ্ধি পায় জনবল। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি সাফল্যের নায়ক স্যামসন এইচ চৌধুরীকে।
সে সময় ওষুধের কাঁচামাল আমদানির একটি লাইসেন্সের জন্য ঘুরতে হয়েছে সরকারের দ্বারে দ্বারে। মফস্বল শহর থেকে ঢাকায় এসে এ লাইসেন্স পাওয়া ছিল কঠিন কাজ। অবশেষে একদিন দেখা মিলল তৎকালীন আমদানি রফতানি নিয়ন্ত্রক শফিউল আযমের সঙ্গে। তাকে জানানো হলো সে কথা। তিনি বেশ আগ্রহ নিয়েই শুনলেন তার শিল্প সৃষ্টির আগ্রহের কথা। তখনকার ওই তরুণ উদ্যোক্তার বক্তব্য শুনে লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন ঝানু আমলা শফিউল আযম। তবে শর্ত জুড়ে দেওয়া হলো_ ওই লাইসেন্সের অধীনে ৬ মাসে আমদানি করা যাবে মাত্র ২ হাজার টাকার কাঁচামাল। এ শর্তেই খুশি হলেন তিনি। আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে চলে যান মফস্বল শহর পাবনায়। দুই বছর চেষ্টার পর লাইসেন্স পাওয়ার এ খবর শুনে আশায় বুক বাঁধেন অন্য পার্টনাররা। আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস কারখানার ১২ শ্রমিকের মাঝেও। এ থেকে স্কয়ারের যাত্রা শুরু হয় নতুন উদ্যমে।
এসব অনেক ছোট ছোট ঘটনা স্কয়ারকে আরও উঁচু হয়ে দাঁড়াতে প্রেরণা জুগিয়েছে। শুধু তাই নয়, স্কয়ার আজ সত্যি সত্যি বাংলাদেশের মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে। তাদের সুনাম, যশ ও খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জাপান, কানাডাসহ পৃথিবীর নানা দেশে। স্কয়ারের এ সাফল্য নতুন প্রজন্মকে সামনে চলার পথ দেখাচ্ছে।
১৯৫৮ সালে এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হলেও উৎপাদন শুরু হয় ১৯৫৯ সালে। শুরুর দিকে শুধু ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ করা হলেও পরে স্কয়ার গ্রুপে একে একে যুক্ত হয় প্রসাধনী, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, কনজুমার প্রডাক্টস, কম্পোজিট টেক্সটাইল, আবাসন, প্রিন্টিং, প্যাকেজিং, হাসপাতাল, তথ্যপ্রযুক্তিসহ আরও অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান। স্কয়ারের তৈরি হরেক রকমের পণ্য আজ মানুষের ঘরে ঘরে। দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে গুণগতমান সম্পন্ন পণ্য তুলে দিতে স্কয়ার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মান, প্রতিযোগিতামূলক মূল্য ও কাজের শৃঙ্খলার কারণে তাদের পণ্য অনেক আগেই পেঁৗছে গেছে দেশ থেকে বিদেশে। উন্নতমানের কারণে স্কয়ার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও প্রশংসা কুড়িয়েছে বারবার।
শিল্প সৃষ্টির নেশা স্যামসন এইচ চৌধুরীকে দাঁড় করিয়েছে সফল শিল্পপতির কাতারে। নিরলস প্রচেষ্টায় একের পর এক গড়ে তুলেছেন নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে স্কয়ার গ্রুপের শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, স্কয়ার টয়লেট্রিজ, স্কয়ার টেক্সটাইলস, অ্যাসট্র্যাস, ফার্মা প্যাকেজেস (প্রা.), হেলথ প্রডাক্টস, বর্ণালী প্রিন্টার্স, স্কয়ার হোল্ডিংস, স্কয়ার সিকিউরিটিজ ম্যানেজমেন্ট, মিডিয়াকম, স্কয়ার কনজ্যুমার প্রডাক্টস, স্কয়ার স্পিনিংস, স্কয়ার ইনফরম্যাটিক্স, স্কয়ার এ্যাগ্রো ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্রসেসিং, স্কয়ার নিট ফেব্রিক্স, স্কয়ার ফ্যাশনস, স্কয়ার হারবাল অ্যান্ড ন্যাচারালস, মাইক্রোসারভ ও স্কয়ার হসপিটালস লিমিটেড।


1:00 am
Sohel

Posted in:
1 comments:
Coin Casino Review – Claim $150 Sign Up Bonus!
Coin Casino offers over 400 casino games, but some of them require players to make a deposit. 제왕 카지노 검증 The casino also has a 1xbet login wide range of slots that come in denominations งานออนไลน์ ranging from luckyclub.live
Post a Comment