online earning

Sunday, January 08, 2012

প্রকৃত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এবং তাদের বিশ্বাস

হাযির-নাযির একমাত্র আল্লাহ, অন্য কেউ নয়, এমনকি রাসূল সা. ও নন
আল্লাহ সর্বদ্রষ্টা এবং সর্বত্র বিরাজমান
আমরা যাকে হাযির-নাযির বিশ্বাস করি তিনি হলেন আল্লাহ। এই গুন আল্লাহ ব্যতিত আর কারো হতে পারে না। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, অর্থ্যাৎ কোন ব্যাপারেই আল্লাহ অন্য কিছুর মত নন। তাই আল্লাহ দেখার ব্যাপারে বান্দার মত চক্ষুর প্রয়োজন হয় না। তার শুনার জন্য বান্দার মত কানের প্রয়োজনও হয় না। তদুপরি আল্লাহ সবকিছুর সর্বদ্রষ্টা,সর্বশ্রুতা এবং সর্বত্র বিরাজমান। আর এরকম সর্বদ্রষ্টা,সর্বশ্রুতা এবং সর্বত্র বিরাজমানকেই হাযির-নাযির বলা হয়। যা একমাত্র আল্লাহর তা'য়ালার গুন। এই গুনে আর কেউ গুনাম্বিত হতে পারে না।

১। এ ব্যাপারে আল্লাহ এক আয়াতে বলেন, وَهُوَ مَعَكُمۡ أَيۡنَ مَا كُنتُمۡۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرٌ۬ অর্থাৎ, তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, আল্লাহ সেখানেই তোমাদের সাথে আছেন এবং তিনি তোমাদের কর্মকান্ড দেখেন।

২। অন্য আয়াতে বলেন, مَا يَڪُونُ مِن نَّجۡوَىٰ ثَلَـٰثَةٍ إِلَّا هُوَ رَابِعُهُمۡ وَلَا خَمۡسَةٍ إِلَّا هُوَ سَادِسُہُمۡ وَلَآ أَدۡنَىٰ مِن ذَٲلِكَ وَلَآ أَڪۡثَرَ إِلَّا هُوَ مَعَهُمۡ أَيۡنَ مَا كَانُواْ অর্থাৎ, কোন ৩ ব্যক্তি যদি চুপে চুপে কথা বলে, তখন আল্লাহ ৪র্থজন হিসাবে, আর কোন ৫ ব্যক্তি যদি চুপিসারে কথা বলে, তখন তিনি ৬ষ্টজন হিসাবে থাকেন। এর কম বা
বেশী হলেও বান্দারা যেখানেই থাকে, তিনি তাদের সাথে সেখানেই থাকেন।

৩। অন্য এক আয়াতে বলেন,
وَٱللَّهُ شَہِيدٌ عَلَىٰ مَا تَعۡمَلُونَ অর্থ্যাৎ, তোমরা যা কিছু করো না কেন, আল্লাহ তা প্রত্যক্ষ করেন।

৪। অন্য আরেক আয়াতে বলেন,
وَأَنتَ عَلَىٰ كُلِّ شَىۡءٍ۬ شَہِيدٌ অর্থাৎ, আর তুমিই সবকিছুর প্রত্যক্ষকারী।

৫। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَىۡءٍ۬ شَہِيدٌ অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু প্রত্যক্ষকারী।

৬। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرٌ۬ অর্থাৎ, আর তোমরা আল্লাহতে ভয় করো এবং জেনো যে, তোমরা যাই কিছু করো না কেন, আল্লাহ তা দেখেন।

৭। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
وَٱللَّهُ بَصِيرُۢ بِٱلۡعِبَادِ অর্থাৎ, আল্লাহ বান্দাদের দেখেন।

৮। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
অর্থাৎ, আল্লাহ তাদের কার্যকলাপ দেখেন।

৯। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
وَٱللَّهُ بَصِيرُۢ بِمَا يَعۡمَلُونَ অর্থাৎ, তোমাদের ইচ্ছামত যাই কিছু করো, আল্লাহ সবই দেখেন।

১০। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
إِنَّهُ ۥ بِكُلِّ شَىۡءِۭ بَصِيرٌ অর্থাৎ, নিশ্চয়ই তিনি সবকিছু দেখেন।

১১। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
وَقَالَ ٱللَّهُ إِنِّى مَعَڪُمۡ অর্থাৎ আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সাথে আছি।

১২। আরেক আয়াতে তিনি বলেন,
وَأَنتُمُ ٱلۡأَعۡلَوۡنَ وَٱللَّهُ مَعَكُمۡ অর্থাৎ, আর তোমরাই হবে বিজয়ী এবং আল্লাহ তোমাদের সাথে আছেন।

হাযির-নাযির বা সর্বত্র বিরাজমান ও সর্বদ্রষ্টা হওয়া একমাত্র আল্লাহ পাকের বৈশিষ্টপূর্ণ গুন হওয়ায় অন্য কাউকে এ গুনে গুনাম্বিত করা শিরকি এবং কুফরি আক্বীদা-বিশ্বাস। কিন্তু কিছু জ্ঞানপাপী এবং ভ্রান্তপন্থী গন্ডমূর্খ লোক আজকাল রাসূল সা.কে হাযির-নাযির বলে বিশ্বাস করে। আর আল্লাহ তা'য়ালার প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে আরো বলে যে, আল্লাহ হাযির-নাযির নন। বরং হাযির-নাযির একমাত্র নবী করীম সা. গুন। একথা বলে তারা নবীজীকে হাযির-নাযির সাজাবার চক্রান্তে লিপ্ত আছে।

অথচ, আল্লাহর রাসূল সা. হাযির-নাযির নন। কারণ, যার আসা-যাওয়া আছে তার হাযির-নাযির হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু যার আসা-যাওয়া নেই তিনি হাযির-নাযির। রাসুল সা. এর আসা-যাওয়া আছে তাই তিনি হাযির-নাযির নন। যেহেতু আল্লাহর আসা-যাওয়া নেই, সেহেতু তিনি হাযির-নাযির: মানে তিনি সর্বত্র বিরাজমান এবং সর্বদ্রষ্টা। এই গুন একমাত্র আল্লাহ তা'য়ালরই, আর কারো নয়।

যদি রাসুল সা. হাযির-নাযির হতেন, তাহলে তিনি কেনই বা মেরাজে গেলেন? আর কেনই বা যাবেন? যদি তিনি গিয়ে থাকেন, তাহলে হাযির-নাযির নন, না গিয়ে থাকলে তাহলে মেরাজ হল কীভাবে? আর যদি না গিয়ে মেরাজ করেন, তাহলে সূরায়ে বনী ইসরাইলে উল্লেখিত এই আয়াতের অর্থ বা উদ্দেশ্যই কী?
سُبۡحَـٰنَ ٱلَّذِىٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلاً۬ مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ٱلَّذِى بَـٰرَكۡنَا حَوۡلَهُ ۥ لِنُرِيَهُ ۥ مِنۡ ءَايَـٰتِنَآ‌ۚ إِنَّهُ ۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ । অর্থাৎ, পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল। এই আয়াতে তো আসা-যাওয়া কথা বলতেছে বুঝা যাচ্ছে।

মোট কথা, আল্লাহ তা'য়ালা ব্যতীত আর কেউই হাযির-নাযির নন। এমনকি রাসূল সা. ও নন। আসুন আমরা এব্যাপারে আক্বীদাকে যাচাই-বাচাই করে সঠিক বিশ্বাস অন্তরে স্থাপন করি। তাহলে মুক্তির আশা করতে পারি।

1 comments:

Unknown said...

حاضر ‘হাযির’-এর আভিধানিক অর্থ হলো উপস্থিত, অর্থাৎ যা অদৃশ্য নয় বা অনুপস্থিত নয়। আর ناظر ‘নাযির’ শব্দটি কয়েকটি অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন-দর্শক, চোখের মণি, দৃষ্টি, নাকের শিরা ও অশ্রু।
মূল কথা হচ্ছে, কোন ব্যক্তি حاضر বা উপস্থিত হতে হলে جسم বা শরীর থাকতে হবে আর ناظر বা দেখনেওয়ালা হতে হলে بصر.عين বা চক্ষু থাকতে হবে।
সাধারণ মানুষের দৃষ্টি যতদূর পর্যন্ত কার্যকরী হয়, ততদূর পর্যন্ত সাধারণ মানুষ ‘নাযির’ বা দেখনেওয়ালা; আর যে স্থান পর্যন্ত সাধারণ মানুষ সক্রিয়রূপে তৎপর হতে পারে সে পর্যন্ত সাধারণ মানুষ ‘হাযির’ বা উপস্থিত। আসমান পর্যন্ত সাধারণ মানুষের দৃষ্টি কার্যকরী হয়ে থাকে, তাই সে পর্যন্ত তারা ‘নাযির’ অর্থাৎ দর্শনকারী; কিন্তু সে স্থান পর্যন্ত সাধারণ মানুষ ‘হাযির’ নয়, কেননা ততদূর পর্যন্ত সাধারণ মানুষ কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনা। যে কক্ষে বা ঘরের মধ্যে সাধারণ মানুষ বিদ্যমান থাকে, সেখানে সে ‘হাযির’, কেননা ঐ ব্যক্তি সে স্থানে সক্রিয় হতে পারে। যিনি যমিনে অবস্থান করে চাঁদের উপরে প্রভাব বিস্তার করে পবিত্র হাত-এর আঙ্গুল মুবারক-এর ইশারায় চাঁদকে দ্বিখ-িত করেছেন তিনি সে পর্যন্ত হাযির ও নাযির।
সুতরাং যদি কারো সম্পর্কে বলা হয় যে, তিনি ‘হাযির-নাযির; এ কথাটির শরয়ী বা পারিভাষিক অর্থ হলো- তিনি পূতঃপবিত্র আধ্যাত্মিক শক্তি সম্পন্ন সুমহান ব্যক্তিত্ব, যিনি এক জায়গায় অবস্থান করে সমগ্র পৃথিবীকে স্বীয় হাতের তালু দেখার মত স্পষ্টই দেখতে পান, নিকট ও দূরের আওয়াজ শুনতে পান; কিংবা এক মুহূর্তে সারা পৃথিবী পরিভ্রমণ করেন, মূলতঃ তা রূহানীভাবেও হতে পারে, বা ‘জিসমে-মিছালী’ সহকারেও হতে পারে; অথবা কবরস্থ বা অন্য কোন জায়গায় বিদ্যমান শরীরের সাহায্যে তথা স্বশরীরেও সংঘটিত হতে পারে।
আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আক্বীদা হলো : মহান আল্লাহ পাক তিনি ইলিম ও কুদরতের দ্বারা সর্বাবস্থায়, সর্বত্র হাযির-নাযির। জাত হিসেবে মহান আল্লাহ পাক তিনি হাযির-নাযির নন। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিফত হিসেবে সর্বত্র হাযির-নাযির।
অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিফত হিসেবে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত ইলিম ও মু’জিযা (ক্ষমতা) দ্বারা সর্বত্র, সর্বাবস্থায় সৃষ্টির শুরু থেকেই বিরাজমান (হাযির-নাযির) ছিলেন, আছেন ও থাকবেন এবং ছিফতীভাবে অর্থাৎ নূর ও রহমত হিসেবেও সৃষ্টির শুরু থেকে সর্বকালে, সর্বযুগে, সর্বাবস্থায় হাযির-নাযির ছিলেন, আছেন ও থাকবেন।
আর জাত হিসেবে মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইখতিয়ার দিয়েছেন। যে জিসিম মুবারক-এ রওযা শরীফ-এ শায়িত আছেন তার অনুরূপ জিসিম মুবারক-এ বা মিছালী জিসিম মুবারকসহ যে কোন সময় যে কোন স্থানে যখন ইচ্ছা তখন হাযির-নাযির হতে পারেন ও হয়ে থাকেন।
অনুরূপভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যাঁরা হাক্বীক্বী নায়িব বা ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া তথা হক্কানী-রব্বানী আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম, উনারাও মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত ক্ষমতায় হাযির-নাযির হতে পারেন ও হয়ে থাকেন।
মূল বিষয় হলো, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মত নন। তবে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত ইলিমের দ্বারা তিনি সব জানেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত ইখতিয়ার বা ক্ষমতায় তিনি হাযির-নাযির। আর আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাও মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রদত্ত সমস্ত নিয়ামতে ধন্য হয়ে হাযির-নাযির হওয়ার ক্ষমতা লাভ করেন।
মূলতঃ হাযির-নাযির তিনভাবে হতে পারে। যথা-
১. একই জায়গায় অবস্থান করে সমগ্র জগত দেখা,
২. এক মুহূর্তের মধ্যে সমগ্র কায়িনাত ভ্রমণ করা ও
৩. একই সময়ে কয়েক জায়গায় দৃশ্যমান হওয়া।

Post a Comment

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Hot Sonakshi Sinha, Car Price in India